মহাপ্লাবন থেকে সুরক্ষায় পুত্রের প্রতি নুহ (আ.)-এর আহ্বান

মহাপ্লাবন থেকে সুরক্ষায় পুত্রের প্রতি নুহ (আ.)-এর আহ্বান

মহাপ্লাবন থেকে সুরক্ষায় পুত্রের প্রতি নুহ (আ.)-এর আহ্বান
মহাপ্লাবন থেকে সুরক্ষায় পুত্রের প্রতি নুহ (আ.)-এর আহ্বান

ধর্ম ডেস্ক: দুনিয়াতে মহান আল্লাহর পাঠানো প্রথম রাসুল নুহ (আ.)। তাঁকে মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা বলেও আখ্যা দেওয়া হয়। কারণ তাঁর চার পুত্রের মধ্যে যে তিন পুত্র আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছিলেন, তাঁদের বংশধরদের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ আবার পৃথিবী আবাদ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তার [নুহ (আ.)-এর] বংশধরদেরই আমি বিদ্যমান রেখেছি বংশপরম্পরায়।

’ (সুরা : সফফাত, আয়াত : ৭৭)

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আরবদের আদি পিতা সাম, হাবশিদের (আবিসিনিয়াদের) আদি পিতা হাম এবং রুমীয়দের (বাইজানটাইনদের) আদি পিতা ইয়াফিস। (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৩১)

নুহ (আ.)-এর মূলত চার পুত্র ছিল। সাম, হাম, ইয়াফিস ও ইয়াম অথবা কেনান। প্রথম তিনজন ঈমান আনেন।

কিন্তু শেষোক্ত জন কাফির হয়ে প্লাবনে ডুবে মারা যান। নুহ (আ.)-এর দাওয়াতে তাঁর জাতির হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন ঈমানদার ব্যক্তি সাড়া দেন এবং তাঁরাই প্লাবনের সময় নুহ (আ.)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে নৌকায় আরোহণের মাধ্যমে নাজাত পান। আর যারা শয়তানের প্ররোচণায় পড়ে তাদের নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য, অর্থ-সম্পদ ও নিজেদের বানানো প্রাণ ও ক্ষমতাহীন পুতুলের ওপর ভরসা করেছিল, ফলে তারা সমূলে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের বিনাশের সময় তাদের পূজিত সেই ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক, নাসর প্রভৃতি কোনো উপকারে আসেনি।
যখন মহান আল্লাহর চূড়ান্ত আজাবের প্লাবন চলে এলো, তখন সেই নেতারাও তাদের কোনো উপকার করতে পারেনি, যারা নুহ (আ.)-এর বিরুদ্ধে তাদের জাতিকে খেপিয়ে তুলেছিল, বরং তারা নিজেরাও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এমনকি নুহ (আ.)-এর বিপথগামী ছেলেকেও তিনি বারবার নৌকায় আরোহণের তাগিদ দিয়েছিলেন, কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করায় তার পরিণতিও অন্য অবিশ্বাসীদের মতো হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘এ সময় নুহ তার পুত্রকে ডাক দিল, যখন সে দূরে ছিল, হে বৎস! আমাদের সাথে আরোহণ করো, কাফিরদের সঙ্গে থেকো না। সে বলল, অচিরেই আমি কোনো পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে প্লাবনের পানি থেকে রক্ষা করবে। নুহ বলল, আজকের দিনে আল্লাহর হুকুম থেকে কারো রক্ষা নেই, একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন সে ছাড়া।

এমন সময় পিতা-পুত্র উভয়ের মধ্যে বড় একটা ঢেউ এসে আড়াল করল এবং সে ডুবে গেল। অতঃপর নির্দেশ দেওয়া হলো, হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল (অর্থাৎ হে প্লাবনের পানি! নেমে যাও)। হে আকাশ! ক্ষান্ত হও (অর্থাৎ তোমার বিরামহীন বৃষ্টি বন্ধ করো)। অতঃপর পানি হরাস পেল ও গজব শেষ হলো।
ওদিকে জুদি পাহাড়ে গিয়ে নৌকা ভিড়ল এবং ঘোষণা করা হলো, জালেমরা নিপাত যাও। এ সময় নুহ তার প্রভুকে ডেকে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার পুত্র তো আমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, আর তোমার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য, আর তুমিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফায়সালাকারী। আল্লাহ বলেন, হে নুহ! নিশ্চয়ই সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই সে দুরাচার। তুমি আমার নিকটে এমন বিষয়ে আবেদন কোরো না, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই। আমি তোমাকে সতর্ক করে দিচ্ছি যেন জাহিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।

নুহ বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার অজানা বিষয়ে আবেদন করা থেকে আমি তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না করো ও অনুগ্রহ না করো, তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব । বলা হলো, হে নুহ! এখন (নৌকা থেকে) অবতরণ করো আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি সহকারে তোমার ওপর ও তোমার সঙ্গী দলগুলোর ওপর এবং সেই (ভবিষ্যৎ) সম্প্রদায়গুলোর ওপর, যাদের আমরা সত্বর সম্পদ দান করব। অতঃপর তাদের ওপর আমাদের পক্ষ থেকে মর্মান্তিক আজাব স্পর্শ করবে। (সুরা : হুদ, আয়াত : ৩৭-৪৮)

এভাবেই সত্যকে প্রত্যাখ্যান করায় নুহ (আ.)-এর পুত্র কেনান তাদের কাফির বন্ধুদের সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গেল। গাইরুল্লাহর ওপর ভরসা ও শয়তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামিদের অন্তর্ভুক্ত করল। মহান আল্লাহ সবাইকে কুফর-শিরক থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply